মো. মানিক হোসেন :
কৃষকবান্ধব সেচ নীতিমালা, ডিপ অপারেটর নির্বাচনে কৃষক সংগঠনের স্বাধীনতা এবং বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) বৈষম্যমূলক সেচ নীতিমালা পরিবর্তন করে কৃষকবান্ধব করার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ, সবুজ সংহতি, বরেন্দ্র কৃষক সমাজ।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর জিরোপয়েন্টে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) বৈষম্যমূলক সেচ নীতিমালা-২০০৮ পরিবর্তন প্রয়োজন করে কৃষকবান্ধব করার দাবিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে- স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নিশ্চই অবগত আছেন যে, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ নিয়ে খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চল গঠিত। বিশেষ করে রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী, নওর্গা, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ জেলাগুলো মারাত্বক খরার ঝুঁকিতে আছে। এই অঞ্চলের কৃষি ও সাংস্কৃতি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় আলাদা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। বিশেষায়িত এই অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নের জন্য সরকার বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (বিএমডিএ) গঠন করে। বিএমডিএর সৃষ্টি থেকে বিভিন্ন সময় নানা নীতিমালা ও আইন তৈরী হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিএমডিএ সেচ নীতিমালা- ২০০৮। নীতিমালাটি একটি বৈষম্যমূলক নীতিমালা এবং কৃষকবান্ধব না হওয়ার কারনে আমরা পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
নীতিমালার দোহাই দিয়ে বরেন্দ্র ডিপগুলো পরিচালনা কৃষকদের মতো না হয়ে তা প্রভাবশালীদের মতো হয়ে থাকে। ‘জোর যার মল্লুক তার’ বিষয়টি এমন হয়েছে। এই ডিপকে কেন্দ্র করেই আমাদের বরেন্দ্র অঞ্চলে সামাজিক সম্প্রীতি এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পারিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হত্যা, মারামারি, ডিপ দখল, পানির অন্যায্যতা, পানি হীনতা এবং প্রান্তিক কৃষকের পানির অধিকার বঞ্চনার শিকার হচ্ছি। এর আগে বিএমডিএ’র ডিপের পানি না পেয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ির দুজন আদিবাসী কৃষক অভিনাথ মারডি ও রবি মারডি অভিমানে হত্যার শিকার হয়েছে।
বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ তাদের অফিস থেকে নিজের ইচ্ছে মত প্রভাবশালীদের এই ডিপ অপারেটর নিয়োগ দেয়। যার ফলে আমাদেরকে বেশি দামে পানি কিনতে হয় এবং সঠিক সময়ে জমিতে পানি পাইনা। বিএমডিএ সেচ নীতিমালা ২০০৮ তাই পরিবর্তন করে এটি কৃষকবান্ধব করা অতিব জরুরী হয়ে পড়েছে। নীতিমালাটি সংশোধন করে কৃষকবান্ধব এবং নীতিমালার ভালো দিকগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানাই আমরা।
তাঁরা আরও বলেন, অন্যদিকে খাস পুকুর জলাধারগুলো লিজ প্রথা বন্ধ করে তা স্থানীয় কমিউনিটিকে ব্যবহারের জন্য দিতে হবে। বরেন্দ্র এলাকার জলাধার, খাল-খাড়ি, নদ নদীগুলো খনন করে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কারন পাতালের পানি তুলতে তুলতে দিনে দিনে পানি শূন্য হয়ে যাচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চল। যা ভবিষ্যতের জন্য বিরাট হুমকি হবে। একই সাথে রাসায়নিক কীটনাশকের যাচ্ছে তাই বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
মানববন্ধনে কৃষকরা দাবি জানান, বৈষম্যমূলক ‘বিএমডিএ সেচ নীতিমালা-২০০৮’ পরিবর্তন করে কৃষকবান্ধব করতে হবে। ডিপ পরিচালনার জন্য সম্পূর্ণ ক্ষমতা কৃষক সমিতি/ কৃষক সংগঠনকে দিতে হবে। সমিতির মাধ্যমেই ডিপ অপারেটর ঠিক করবেন। সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৯ পরিবর্তন করে কৃষক ও জনবান্ধব করতে হবে। খাস পুকুর দিঘি, জলাধার জলমহালগুলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে, লীজ দেয়া যাবেনা। বরেন্দ্র অঞ্চলের সকল প্রাকৃতিক জলাধারগুলো সংস্কার করতে হবে। দখলমুক্ত করে সেগুলো কৃষকদের সেচের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
দাবিগুলো পুরণে কার্যকর ও দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে পানির অধিকার নিশ্চিত করতে তাঁরা বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।