বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৪:২০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

টয়লেটে ১০ মিনিটের বেশি থাকলেই বিপদ!

অনেকে টয়লেটে বেশি সময় নেন। বিশেষ করে যারা ফোন নিয়ে যান তাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। শৌচাগারে যে কাজটি ৩ মিনিটে করা সম্ভব, সেটি মোবাইল ব্যবহারের কারণে ১০ থেকে ১৫ মিনিটও নিয়ে নেন কেউ কেউ।
এটিকে সময় কাটানোর উপায় বলে মনে হলেও চিকিৎসকরা যা বলছেন, তা ভালো কিছু নয়।
কারণ টয়লেটে বেশিক্ষণ থাকলে স্বাস্থ্যের জন্য বড় ক্ষতি হতে পারে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এমনটিই বলা হয়েছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে অবস্থিত ‘ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস সাউথওয়েস্টার্ন মেডিকেল সেন্টার’-এর ‘কোলোরেক্টাল সার্জেন’ ডা. লাই ঝু বলেছেন, ‘টয়লেটে দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে অর্শ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। পাশাপাশি শ্রোণীদেশের পেশি দুর্বল হয়।

এই চিকিৎসক বলেন, ‘যখন রোগীরা এসব সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসেন, দেখতে পাই এদের বেশির ভাগেরই টয়লেটে বেশি সময় বসে থাকার ইতিহাস রয়েছে।’

একই বিষয়ে নিউ ইয়র্কের স্টোন ব্রুক মেডিসিনের ইনফ্লামাটোরি বাওয়েল ডিজিজ সেন্টারের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারাহ মঞ্জুর বলেন, ‘সাধারণত গড়ে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট টয়লেটে কাটানো উচিত।’
বেশিক্ষণ বসে থাকলে সমস্যাটা হলো পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি যেমন আমাদের মাটিতে ধরে রাখে তেমনি একই কারণে দেহের নিচের অংশ থেকে রক্ত টেনে ওপরে তুলতে হৃৎপিণ্ডকে বেশি কাজ করতে হয়। কমোডের ডিম্বাকৃতি বসার জায়গায় দেহের নিম্নাংশ অনেকখানি ঢুকে থাকে।

ফলে মলনালি নিম্নগামী হয়ে থাকে এই অবস্থায়। যা সাধারণভাবে বসে থাকার ক্ষেত্রে হয় না। আর মধ্যাকর্ষণ শক্তি যখন দেহের নিম্নাংশ এভাবে নিচের দিকে টেনে ধরে রাখে, তখন রক্তচাপেও প্রভাব পড়ে।

ডা. লাই ঝু বলেন, ‘এই অবস্থায় রক্ত নিচের দিকে বেশি সঞ্চালিত হয় তবে ওপরের দিকে উঠতে বেগ পেতে হয়।’ যা অর্শরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

এছাড়া টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে শ্রোণীদেশের পেশিও দুর্বল হয়। এই পেশিগুলো অন্ত্রের ও পাকস্থলীর নড়াচাড়া এবং দেহের নিম্নাংশের কার্যক্রম ও মল ভালোমতো নিঃসরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আবার জোরে চাপ দিয়ে মলত্যাগ করলেও অর্শরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়া মলদ্বারের পেশিও দুর্বল করে দেয়, বেশি চাপ দেওয়ার কারণে। এর থেকে ‘রেক্টাল প্রোল্যাপ্স’ হয়। অর্থাৎ, বৃহদান্ত্রের কিছু অংশ পিছলিয়ে মলদ্বার থেকে বের হয়ে ঝুলে পড়ে।
ডা. লাই ঝু পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ‘যদি কোনো কারণে ১০ মিনিটের মধ্যে মলত্যাগ না হয়, তবে বের হয়ে আসুন। হাঁটাহাঁটি করে অন্ত্রের পেশিগুলোকে জাগিয়ে তুলুন, যাতে মলের চাপ তৈরি হয়।’

দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা বা অস্বস্তি যদি মল নিঃসরণের ক্ষেত্রে থাকে তবে সেটা নানান ধরনের হজমতন্ত্র বিষয়ক জটিলতার লক্ষণ হতে পারে। যেমন- ‘ইরিটেবল বাওল সিন্ড্রম’ এবং ‘ক্রন’স রোগ।

ডা. ইয়ারেডামো বলেন, ‘অতিরিক্ত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকাটা পায়ুপথের ক্যান্সার হওয়াকে নির্দেশ করে। যদি মলাশয়ের ভেতরে কোনো কিছু বেড়ে ওঠে স্ফিত হয়, তবে মল প্রবাহের গতি বাধা প্রাপ্ত হয়। যে কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের পাশাপাশি পায়ুপথ দিয়ে রক্তপাতও হয়।’
তাই অস্বাভাবিক সময় টয়লেটে বসে থাকতে হলে বা অসম্ভব ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দীর্ঘদিন থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।

পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করে দেহ আর্দ্র রাখা, আঁশযুক্ত খাবার বেশি গ্রহণ যেমন- ওটস এবং মটর- খাওয়ার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব। আঁশ ও পানি মল নরম করে বের হয়ে যেতে সাহায্য করে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Like Our Page