 
						২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হলেও সেই হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাইতে রাজি নন ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের নয়াদিল্লিতে নির্বাসনে থাকা অবস্থায় আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এএফপি এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এই অবস্থান জানিয়েছেন।
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। তিনি দাবি করেন, চলমান বিচার প্রক্রিয়া একটি ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’-এর মতো, যেখানে রায় আগেই নির্ধারিত। হাসিনা বলেন, মৃত্যুদণ্ডের রায় হলে তিনি ‘অবাক বা ভীত হবেন না’।
দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা নিহতদের প্রতি শোক জানালেও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানান। তার দাবি, “বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ সরকার উৎখাতের চক্রান্তে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল।”
তিনি বলেন, “আমি নেতৃত্বের দায় নিচ্ছি, তবে আমি নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালাতে বলেছিলাম — এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
রয়টার্সকে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন না করে লাখো মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। “আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া অন্যায় ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “একটি কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা চাইলে, আপনি লাখ লাখ মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারেন না।”
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ যা চায়, তা দিতে হলে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পুনর্বহাল করতে হবে।”
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই প্রথম সংবাদমাধ্যমে মুখ খুললেন শেখ হাসিনা। তিনি জানান, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে তিনি “নিরিবিলি ও স্বাধীনভাবে” বসবাস করছেন এবং মাঝে মাঝে লোধি গার্ডেনে হাঁটতে যান। তবে পরিবারের ওপর অতীত হামলার কারণে সতর্ক আছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য সাংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা পরিবার দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে না।”
হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া হলে দলটির লাখো সমর্থক ভোট বয়কট করবে।
“আমরা আমাদের ভোটারদের অন্য দলকে সমর্থন করতে বলছি না,” বলেন তিনি, “তবে আশা করি শুভবুদ্ধির উদয় হবে, এবং আমরা নিজেরাই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাব।”
শেখ হাসিনা বলেন, “এটা আমার বা আমার পরিবারের ব্যাপার নয়; বাংলাদেশের জন্য সাংবিধানিক শাসন ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসা দরকার।”