তওবার শাব্দিক অৰ্থ ফিরে আসা। উদ্দেশ্য গুনাহ থেকে ফিরে আসা। কোরআন ও সুন্নাহর পরিভাষায় তওবার অর্থ পূর্বের গুনাহের জন্যে অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে গুনাহের ধারে কাছে না যাওয়া।
বিশুদ্ধ বা নিষ্ঠাপূর্ণ তওবা হল— ১. তওবা একমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে। ২. যে গুনাহ থেকে তওবা করা হচ্ছে, তা শিগগির ত্যাগ করতে হবে। ৩. এই গুনাহ করে ফেলার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। ৪. আগামীতে এই গুনাহ ‘আর করব না’ বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে। ৫. যদি এই গুনাহের সম্পর্ক কোন বান্দার অধিকারের সাথে হয়, তবে যার অধিকার নষ্ট হয়েছে, তার সাথে মিটমাট করে নিতে হবে। যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
তওবাকারীর তওবা যদি খাঁটি হয় এবং তা আল্লাহর কাছে কবুলযোগ্য হয়ে যায়, তবে তার আমলনামা থেকে গুনাহসমূহ মুছে ফেলা হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, খাঁটি তওবা; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, নবী ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সেদিন আল্লাহ লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের আলো তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদের জন্য আমাদের আলো পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন; নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে সর্বক্ষমতাবান। (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৮)
অর্থাৎ খাঁটি মনে আল্লাহর কাছে তওবা করার ফলে ব্যক্তির গুনাহের পাল্লা হালকা হয়ে যাবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই সৎকর্মসমূহ মন্দ কর্মসমূহকে বিদূরিত করে (সুরা হূদ, আয়াত : ১১৪)।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘পাপ থেকে তওবাকারী ব্যক্তি পাপমুক্ত ব্যক্তির মতো।’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস :৪২৫০;)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমা পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং এক রমজান দ্বারা পরবর্তী রমজান পর্যন্ত মধ্যবর্তী যাবতীয় সগিরা গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়া হয়, যদি সে ব্যক্তি কবিরা গোনাহ থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)
রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘তুমি যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং পাপের পরে পুণ্য কর, যা পাপকে মুছে ফেলবে’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৭)।
অন্য এক হাদিসে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো বাড়ীর সামনে যদি কোন নদী থাকে আর দৈনিক পাঁচবার তাতে গোসল করা হয় তাহলে তার কি কোন ময়লা বাকী থাকবে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, তার কোন ময়লাই অবশিষ্ট থাকবে না। তখন রাসুল (সা.) বললেন, এটাই হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণ। আল্লাহ এর মাধ্যমে গুণাহগুলো ক্ষমা করে দেন। (বুখারি, হাদিস : ৫২৮)
কোরআনের আয়াত এবং হাদিসের মাধ্যমে বুঝা যায় গুনাহ হয়ে গেলে আল্লাহর কাছে তওবা করে নিতে হবে সঙ্গে সঙ্গে এবং প্রতিদিন নেক আমল ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে। একনিষ্ঠ তওবা ও নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই গুনাহগুলো মাফ কবেন এবং মন্দ আমলকে নেক আমলে পরিবর্তন করবেন তবে সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মাফ করবেন কিনা এটা আল্লাহর একান্ত বিষয়। তবে আমাদের সবসময় গুনাহ থেকে মুক্ত থাকার নেক এবং নেক আমল করার মানসিকতা রাখতে হবে।